ঢাকা,সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪

কক্সবাজারে পর্যটন শিল্পের অগ্রগতিতে বাধা রাস্তাঘাট ও পরিবেশ!

কক্সবাজার প্রতিনিধি ::

কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প গত এক দশকে হোটেল- রেস্তোরাঁসহ নানা খাতে যথেষ্ট অগ্রগতি অর্জন করলেও পরিপূর্ণ বিকশিত হওয়ার পথে এখন প্রধান বাধা হয়ে রয়েছে রাস্তাঘাট বা যোগাযোগ ব্যবস্থার সমস্যা। বিমানে এক ঘণ্টারও কম সময়ে রাজধানী থেকে পর্যটননগরী কক্সবাজারে পৌঁছাতে সক্ষম হলেও স্থলপথে আসা যাওয়া এখনও খুব ভোগান্তির। স্থলপথে সময় লাগে আকাশপথের প্রায় ১৫ গুণ। এছাড়া শহরের রাস্তাঘাট দুর্ভোগের এবং রাস্তার মোড়ে মোড়ে দুর্গন্ধ ছড়ানো ময়লার স্তুপ পর্যটন শহরের সাথে বড়ই বেমানান বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের শহর কক্সবাজার দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় অবকাশ যাপন কেন্দ্র। এখানে ইতোমধ্যে দেশের সবচেয়ে বেশি তারকা মানের হোটেলসহ চার শতাধিক আবাসিক হোটেল-মোটেল গড়ে ওঠেছে, যেখানে প্রায় সোয়া লক্ষাধিক মানুষ রাত যাপন করতে পারে। রয়েছে ২ শতাধিক আধুনিক রেস্তোরাঁ। টেকনাফ-সেন্টমার্টিন জলপথে চলাচল করছে ছয়টি পর্যটকবাহী জাহাজ। সোনাদিয়া দ্বীপেও চলতি মৌসুম থেকে জাহাজ চালু হয়েছে। রামুতে আধুনিক স্থাপত্যে বৌদ্ধ মন্দির গড়ে ওঠেছে।

ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কও দিনদিন আরো উন্নত হচ্ছে। খুটাখালী মেদাকচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যানও ধীরে ধীরে চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সমুদ্র তীরবর্তী মেরিন ড্রাইভ চালু হয়েছে। এতে যুক্ত হয়েছে বিনোদনের নতুন মাত্রা। ফলে কক্সবাজারে পর্যটন শিল্পে প্রত্যাশার কাছাকাছি অগ্রগতি ঘটলেও একটি বিশ্বমানের পর্যটন নগরী হিসাবে বিকশিত হওয়ার পথে প্রধান বাধা হয়ে রয়েছে রাস্তাঘাট ও যোগাযোগ ব্যবস্থার নাজুক দশা। বিমানে এক ঘণ্টারও কম সময়ে রাজধানী থেকে কঙবাজারে পৌঁছা যায়। কিন্তু স্থলপথে আসা যাওয়া এখনও বেশ ভোগান্তির। সময় লাগে ১২ থেকে ১৫ ঘণ্টা পর্যন্ত। বিমানে দৈনিক হাজারের কম মানুষ আসা যাওয়া করতে পারেন। বাকিদের আসতে হয় স্থলপথেই। পথে পথে রাস্তাঘাটে রয়েছে নানা দুর্ভোগ।

পর্যটন শহরের রাস্তাঘাটও বড় দুর্ভোগের। মেরিন ড্রাইভের প্রবেশ মুখ কলাতলীতে প্রায় ১ কি.মি ভাঙা রাস্তার কারণে কক্সবাজার-টেকনাফ সমুদ্র তীরবর্তী ৮০ কি.মি দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভের সৌন্দর্য ম্লান। শহরের অন্যান্য অংশের গুরুত্বপূর্ণ অনেক রাস্তারও করুণ দশা। এছাড়া রাস্তার মোড়ে মোড়ে খোলা ডাস্টবিন ও যত্রতত্র দুর্গন্ধ ছড়ানো ময়লার স্তুপ পর্যটন শহরের সাথে মানানসই নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন কক্সবাজারের (টোয়াক বাংলাদেশ) সাবেক সভাপতি এসএম কিবরিয়া খান বলেন, কক্সবাজারের হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোর অধিকাংশই বেশ মানসম্পন্ন। রয়েছে ৫/৬টি পাঁচতারকা হোটেলসহ চার শতাধিক আবাসিক হোটেল ও গেস্টহাউস। যে কারণে থাকা-খাওয়া নিয়ে কোন পর্যটককে দুঃশ্চিন্তায় পড়তে হয় না। সাগর ও পাহাড় দেখেই মানুষ মোটামুটি সনু্তষ্ট। বিনোদনেরও অনেক ব্যবস্থা রয়েছে। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতিও ভাল। কিন্তু রাস্তাঘাটের করুণ দশা এবং যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনার স্তুপ পর্যটকদের কাছে বেশ দুর্ভোগের।
তিনি মনে করেন, পর্যটকদের জন্য শহরের রাস্তাঘাট আরো উন্নত করা, সৌন্দর্যবর্ধন ও পরিবেশসম্মত করে গড়ে তোলার মাধ্যমে একটি আন্তর্জাতিক মানের নগরীতে পরিণত করা যায় কক্সবাজারকে । কক্সবাজার  চেম্বারের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী কঙবাজারে পর্যটন শিল্পের অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, পরিবেশের বিষয়টি নজরে রেখেই উন্নয়ন করতে হবে। কারণ কক্সবাজারের পাহাড়, সমুদ্র সৈকত, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য না থাকলে মানুষ এখানে কী দেখতে আসবে?
তিনি কক্সবাজার রাস্তাঘাটের আরো উন্নয়ন ঘটিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতকরণ এবং নতুন নতুন পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তুলে এ শিল্পকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্র করে গড়ে তোলা যায় বলে মন্তব্য করেন। কক্সবাজারের পর্যটনশিল্পের উন্নতির জন্য রাস্তাঘাটের উন্নয়ন ও সৌন্দর্যবর্ধনসহ পর্যটন ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ বলে মনে করেন কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার।
তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা যাতে সরকারি সেবা সংস্থাগুলোর কোন হয়রানির শিকার না হয় এবং বৈধ সেবাপ্রাপ্তি যেন দ্রুত নিশ্চিত হয়, সেই ব্যবস্থা নিলে কক্সবাজারে পর্যটন ব্যবসায় বিনিয়োগ বাড়বে এবং নির্মাণ বন্ধ থাকা অনেক নতুন প্রতিষ্ঠান চালু হবে।
কক্সবাজারকে ইটের শহর নয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের শহর বানাতে হবে বলে মনে করেন কক্সবাজার পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি মুহম্মদ নুরুল ইসলাম।তিনি বলেন, ইট-কঙ্করের শহর ফেলে এখানে প্রকৃতির শহরে মানুষ নিঃশ্বাস নিতে আসে।
কক্সবাজারে পর্যটন শিল্পের অগ্রগতির পথে শব্দ দূষণের বিষয়টিও একটি নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করছে বলে মনে করেন ঢাকা থেকে সপরিবারে বেড়াতে আসা পর্যটক ড. ইকবাল আহমদ।
তিনি মনে করেন, যান্ত্রিক শহর ছেড়ে এখানে মানুষ নির্জনতায় একটু সময় কাটাতে আসে। কিন্তু পথে পথে মাইক ও এম্প্লিফায়ারে গানের গর্জনে দু’জনে কথা বলাও দায়।
কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্ণেল (অব:) ফোরকান আহমদ কক্সবাজারকে একটি বিশ্বমানের পর্যটননগরী হিসাবে গড়ে তুলতে নানা পরিকল্পনা ও প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে এবং বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলে জানান।

পাঠকের মতামত: